হস্তান্তরের আগেই ব্যবহার অনুপযোগী গুচ্ছগ্রামের ঘর
প্রকাশিত : ০৭:২৪ AM, ৬ অক্টোবর ২০১৯ রবিবার ১১১ বার পঠিত
হস্তান্তরের আগেই ব্যবহার অনুপযোগী গুচ্ছগ্রামের ঘর বরগুনায় গুচ্ছগ্রামের ঘর নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার এবং উপকারভোগী বাছাইয়ে ঘুষ নেওয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, যেনতেনভাবে ভিটি তৈরি করার ফলে হস্তান্তরের আগেই তা ভেঙে যেতে শুরু করেছে। ঘরের চালা দিয়েও পড়ছে বৃষ্টির পানি।
সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বরগুনার তালতলী উপজেলার ৩টি গুচ্ছগ্রাম বড়বগী সৈকতে ৫৮টি, সোনাকাটা নিদ্রাচরে ৫০টি এবং কবিরাজপাড়ায় ৪০টি ঘর নির্মাণের জন্য দুই কোটি ২২ লাখ টাকা এবং ৪২৭ টন চাল বরাদ্দ দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের জুন মাসে। এখনও ঘর হস্তান্তর করা হয়নি উপকারভোগীদের মাঝে। এরই মধ্যে ভেঙে যেতে শুরু করেছে নির্মাণাধীন ঘরের ভিটি, পড়ে যাচ্ছে ঘরের দরজা, জানালা এবং বেড়া। বৃষ্টির পানি পড়ছে ঘরের চালা দিয়ে। পুকুরের ভেতরে টয়লেট করার কারণে ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে গেছে পানি।
তালতলীর ইউএনও দীপায়ন দাস শুভ নিজের নামে টাকা উত্তোলন করে ঘরের কাজ করিয়েছেন। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সিপিসির মাধ্যমে চাল দিয়ে মাটির কাজ সম্পন্ন করেছেন। তবে স্থানীয়দের দাবি, ইউএনও নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে কাজ করার ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
বড়বগী সৈকত গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা কাদের তালুকদার, রাবেয়া বেগম, মুনসুর হাওলাদারসহ কয়েকজন বলেন, ‘ঘরে ওডার (ওঠার) আগেই পোতা (ভিটি) ভাইঙা পড়ছে, দুয়ার (দরজা), জাঙলা (জানালা), বেড়া ছুইট্টা গেছে। চাল দিয়া বৃষ্টির পানি পড়ে। পুকুরের মধ্যে (ভিতরে) পায়খানা দিছে, যার কারণে পানি ব্যবহার করা যায় না। ফলে একাধিক ঘর খালি পড়ে আছে, কেউ বসবাস করছেন না।’
কালাম মীরা নামে ওই এলাকার সমাজসেবক বলেন, তালতলী ইউএনও প্রভাব দেখিয়ে নিম্নমানের মালপত্র দিয়ে ঘর নির্মাণ করেছেন। এসব বিষয়ে কেউ কোনো কথা বললে তাদের নানাভাবে হুমকি দেওয়া হয়।
সোনাকাটা নিদ্রাচর গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা জসিম উদ্দীন হাওলাদার, মিনারা বেগম, শাফিয়া বেগম, মহিবুল্লাহ, রিনা বেগমসহ একাধিক উপকারভোগী অভিযোগ করেন, ইউপি সদস্য শহীদ আকন ঘরের কাগজপত্র ঠিক করে দেওয়ার শর্তে প্রত্যেক উপকারভোগীর কাছ থেকে এক হাজার করে টাকা নিয়েছেন। যারা টাকা দিতে অস্বীকার করেছে তাদের নামে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হবে না বলেও তিনি হুমকি দেন।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য শহীদ আকন বলেন, রাজনৈতিক বিরোধের কারণে প্রতিপক্ষ কবির আকনের লোকজন আমার নাম ভাঙিয়ে উপকারভোগীদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে টাকা উত্তোলন করেছে।
বড়বগী সৈকত গুচ্ছগ্রামের মাটির কাজের সিপিসি ও বড়বগী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড সদস্য সিদ্দিকুর রহমান বলেন, তকে কাজের সিপিসি রাখা হলেও ইউএনও একজন ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ করিয়েছেন। এ বিষয়ে এবং কাজের অনিয়ম নিয়ে তিনি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করলে, তদন্ত কমিটি এসে কাজের অনিয়মের প্রমাণ পায়। পরে বরাদ্দ ১২৫ টন চাল ফেরত দেওয়া হয়েছে।
সোনাকাটা ইউনিয়নের নারী সদস্য ও কবিরাজপাড়া গুচ্ছগ্রামের মাটির কাজের সিপিসি ময়না বেগম বলেন, তাকে কাজের সিপিসি করা হলেও তিনি কাজের বিষয়ে কিছুই জানেন না। তবে ইউএনও যেখানে স্বাক্ষর দিতে বলেছেন সেখানে স্বাক্ষর দিয়েছেন।
সোনাকাটা নিদ্রাচর গুচ্ছগ্রামের সিপিসি ও সোনাকাটা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড সদস্য শহীদ আকন বলেন, কাজের বিষয়ে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন না। তবে ইউএনওর নির্দেশে স্বাক্ষর করেছেন।
পিআইও মহসিন উল হক বলেন, সিপিসির মাধ্যমে ঘরের মাটির কাজ সম্পাদন এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে তারা স্বাক্ষর করেছেন।
ইউএনও দীপায়ন দাস শুভ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। যে ঘরগুলোতে ত্রুটি ছিল তা শনাক্ত করে সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমার পক্ষ থেকে যাকে কাজ দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তার সঙ্গে আমার চুক্তি সম্পাদন হয়েছিল, সে অনুযায়ী তাকেই উত্তোলনকৃত টাকা দেওয়া হয়েছে।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে একটি দল এসে তদন্ত করে গেছে, তবে কোনো প্রতিবেদন আমি পাইনি। গুচ্ছগ্রাম নির্মাণের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আস/এসআইসু
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি Alokito Sakal'কে জানাতে ই-মেইল করুন- dailyalokitosakal@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
Alokito Sakal'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।