সুস্থ সমাজ গড়তে দরকার সৃজনশীল কর্মসূচী
প্রকাশিত : ১০:৩৫ AM, ২৫ জানুয়ারী ২০২১ সোমবার ৯৫ বার পঠিত
মা কিছু কাপড়ের টুকরা দাওনা। মা যেন আগে থেকেই জানত। মেশিনের ড্রয়ার খুলে বেশ কিছু কাপড়ের টুকরো দিত, সারাদিন তা দিয়ে পুতুল বানিয়েই খেলতাম।আমাদের ছেলেবেলার বিনোদন বলতে ছিল এসব পুতুলখেলা, রান্না-বান্না খেলা আরও কত কি।স্কুলে টিফিনের ফাঁকে খেলেছি বউচি, গোল্লাছুট, দাড়িয়াবান্ধা, নাম- দেশ- ফুল- ফল, চোর- ডাকাত- পুলিশ অসংখ্য খেলা। এসব খেলার মাধ্যমে মনের অজান্তেই আমরা শিখে গেছিলাম ধৈর্য্য, সহনশীলতা, একতার শক্তি, আত্নমর্যাদাবোধ প্রভৃতি মানবিক গুণাবলী। এভাবে বিনোদনের মাধ্যমগুলো আমাদের মনের খোরাক জোগানোর পাশাপাশি শিক্ষা দিয়েছিল প্রকৃত মানুষ হবার দীক্ষা।
আমরা যদি আজ আমাদের সমাজের দিকে তাকাই, বেশিরভাগই বিরাজ করছে অস্থিরতা, অস্থিতিশীলতা, বিশৃঙ্খলা, মানসিক ভারসাম্যহীনতা যা ক্রমেই প্রকট হয়ে উঠছে। কিন্তু এর পেছনে কারণ কি? “তরুণ প্রজন্মের নৈতিক অবক্ষয়কে” আমরা এজন্য দায়ী করি। কিন্তু সামাজিক এই অবক্ষয়ের জন্য কি শুধুই তরুণ সমাজ দায়ী? নাকি সমাজ কাঠামোতে আধুনিকায়ন ও শিল্পায়নের ফলে পরিবর্তিত বিনোদন মাধ্যমগুলো দায়ী?
একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সামাজিক অবক্ষয় কিন্তু একদিনে হয় না। বর্তমানে বাচ্চারা জন্মেই দেখছে টিভি, কম্পিউটার, স্মার্ট ফোন, ভিডিও গেমস, ব্যাটারিচালিত বিভিন্ন খেলনা, যা ক্রমেই হয়ে উঠছে তাদের বিনোদনের মাধ্যম। এসব মাধ্যমগুলো একটি শিশুর সুস্থ বিকাশে রসদতো জোগায়ই না বরং তাদের বুদ্ধির সুস্থ, সৃজনশীল বিকাশকে করছে বাধাগ্রস্ত। ফলে আমাদের তরুণ প্রজন্ম হয়ে পড়ছে অধৈর্য্য, অসহনশীল ও নৈতিকতা বিভক্তিত। আমেরিকায় মনোবিজ্ঞানীদের পরিচালিত এক গবেষণায় তারা দেখেছেন প্রায় ৪০ ভাগ অটিজমে আক্রান্ত ( মস্তিষ্কের সুস্থ বিকাশ হয় না যাদের, আক্রান্ত শিশুদের পেছনে কারণ টিভির সাথে বেশি সময় কাটানো)
আমি বিজ্ঞানের আশীর্বাদগুলোকে কোন ক্রমেই ছোট করে দেখছি না। তবে আমাদের শিশুদের তথা তরুণ প্রজন্মের হাতে এসব জিনিস তুলে দিয়ে সচেতন থাকছি কিনা বা তাদেরকে ভালো মন্দের বিভেদ করবার দিক নির্দেশনা দিচ্ছি কিনা তা ভাববার বিষয়। স্মার্টফোনে ইন্টারনেট সংযোগে হাতের মুঠোয় থাকছে পুরো পৃথিবীর সংস্কৃতি তথা জীবন ব্যবস্থা। একই সাথে ইতিবাচক দিক যেমন তার রয়েছে, আছে নেতিবাচক প্রভাবও।কিছু খারাপ সাইট দেখে তারা ধারণা করে উন্নত বিশ্ব কেবল আনন্দ আর ভোগ বিলাসেই মত্ত।তাই তারাও তা সাদরে গ্রহণ করে, কেননা তরুণদের ধর্মই নতুনকে সাদরে গ্রহণ করা।কিন্তু তাদেরকে এটা বোঝানো জরুরি যে এখনও পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জ্ঞানচর্চা, মেধার বিকাশ উন্নত দেশসমূহেই হচ্ছে।জ্ঞান – বিজ্ঞানের বিকাশে তারা কিভাবে অবদান রেখে চলছে। এক্ষেত্রে আমাদের পারিবারিক শিক্ষা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। আলাদা করে স্মার্টফোনের কথা বলতে হলে, কর্মব্যস্ত জীবনে এ যন্ত্র ছাড়া যেন আমরা এক মুহুর্তও কল্পনা করতে পারি না। বিনোদনের আরেক মাধ্যমও বলা যায় একে। তরুণ প্রজন্মের হাতে হাতে এ যন্ত্র। যার মাধ্যমের বদৌলতে ঘটছে নানা অপরাধ, সমাজ শিকার হচ্ছে অবক্ষয়ের। প্রতারণার শিকার হচ্ছে তরুণ- তরুণীরা, ঘটছে অপহরণ, বন্ধু খুন হচ্ছে বন্ধুর হাতে। বাবা- মায়ের কাছ থেকে ফোন না পেয়ে অনেকেই বেছে নেয় আত্নহত্যার মত অপরাধ কিংবা জড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন অনৈতিক সম্পর্কে। পত্রিকার পাতা খুললে অহরহই যা আমাদের চোখে পড়ে। মনকে করে ব্যাথিত,মর্মাহত।
দায়িত্বশীল প্রতিটি নাগরিকের উচিত আমাদের শিশুদের তথা তরুণ প্রজন্মের হাতে সুস্থ বিনোদনের মাধ্যমগুলো তুলে ধরা। টিভি কিংবা ইন্টারনেট নয় বরং যেকোন ধরণের খেলাধুলা, বিতর্ক ( হতে পারে তা সামাজিক বা রাজনৈতিক) একটু লেখালেখি, দেশ সেবা বা উন্নয়নমূলক যেকোনো কাজ এসবই হয়ে উঠুক তরুণ প্রজন্মের বিনোদনের মাধ্যম। সুস্থ, সৃজনশীল আনন্দদায়ক কর্মের মাধ্যমে আমরাও পেতে পারি একটি সুস্থ সমাজ।
লেখকের মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি Alokito Sakal'কে জানাতে ই-মেইল করুন- dailyalokitosakal@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
Alokito Sakal'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।