শুধু লাভেই আছে বেসরকারি ব্যাংক
প্রকাশিত : ০৫:৫৬ AM, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ রবিবার ২৫৮ বার পঠিত
ব্যাংক খাত মানেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম, নীতি ও নৈতিকতার মধ্যে থেকে আমানত সংগ্রহ করে বিনিয়োগ করে এবং তা থেকে মুনাফা করে। কিন্তু এর বাইরে রাষ্ট্রীয় লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কম মুনাফাতে ব্যাংককে কাজ করতে হয়। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কিছু নীতি সহায়তা ও প্রণোদনা দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক বিভিন্ন কাজ করলেও বেসরকারি ব্যাংকগুলো এ থেকে দূরে থাকছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, নামেমাত্র ফি নিয়ে, কোনো মুনাফা হয় না-এ ধরনের প্রায় ৫৩টি কাজ করে থাকে। এর মধ্যে পথ শিশু, স্কুলগামী শিশু, পরিচ্ছন্ন কর্মী, কৃষকদের ভর্তুকি বিতরণ, পোশাক শ্রমিক, প্রতিবন্ধী, খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় প্রান্তিক মানুষসহ বিভিন্ন ধরনের প্রান্তিক মানুষের ১০, ৫০ এবং ১০০ টাকার ব্যাংক হিসাব খোলা অন্যতম। এসব অ্যাকাউন্ট কম টাকায় খোলা হয় এবং প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে এ ব্যাংকিং।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ ধরনের ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ১ কোটি ৯৪ লাখ ৯৮ হাজার ৪৫টি। আর এসব হিসাবের মধ্যে শিশুদের ব্যাংক হিসাব বাদে সব হিসাব খুলেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, কৃষি ব্যাংক, বিডিবিএল, বেসিক ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। এসব অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে প্রান্তিক এসব মানুষের ক্ষুদ্র জমার পাশাপাশি কম সুদে ঋণও বিতরণ করা হয়।
এসব ব্যাংকিংয়ে মুনাফা না হওয়া ও পরবর্তীতে মুনাফার হওয়ার সম্ভাবনা না থাকার কারণে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এ ধরনের ব্যাংকিং করে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়। কৃষকের ১০ টাকার মোট এক কোটি ৩৬ হাজার ৯০৭টি হিসাবের মধ্যে সবগুলোই করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত আট ব্যাংক। কৃষকের হিসাব বহির্ভূত ৯০ লাখ ৯৮ হাজার ৬১৪টি হিসাবও খুলেছে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংক।
স্কুল ব্যাংকিংয়ের জন্য তুলনামূলক কম খরচে হিসাব খুলতে হয়। এ ধরনের ব্যাংকিং করেও কোনো লাভ করতে পারে না বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী শিশুরা ১৮ বছর বয়সের নিচে অভিভাবকের সঙ্গে স্কুল ব্যাংকিং করবে। ১৮ বছর অতিক্রম করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওই হিসাব বয়স্ক মানুষের হিসাবে পরিণত হবে। পাশাপাশি আয়ের হিসাব না নেওয়া ও অন্যান্য সুবিধা থাকার কারণে অভিভাবকের সঞ্চয় শিশুর নামে ব্যাংকে জমা হয়।
এসব বর্তমান ও ভবিষ্যতের মুনাফার জন্য বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো শিশুদের ব্যাংক হিসাব খোলার ক্ষেত্রে কয়েক ধাপ এগিয়ে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মোট ১৯ লাখ ৯৬ হাজার ৩০টি ব্যাংক হিসাবের মধ্যে ৭০ ভাগ বা ১৩ লাখ ৮৭ হাজার ৭২৫টি হিসাব খুলেছে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এসব হিসাবে আমানতের পরিমাণ এক হাজার ২৩৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বা শিশুদের হিসাবে মোট জমা হওয়া টাকার ৮৩ শতাংশ। আর বাকি ব্যাংক হিসাব ও আমানত সংগ্রহ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক। স্কুল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে আগামী দিনের ব্যাংকারের বিষয় যুক্ত থাকার কারণে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো স্কুল ব্যাংকিং করে থাকে।
কৃষিঋণ বিতরণে সুদহার কম ও পরিচালন ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আগ্রহ দেখায় না। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নির্দেশনা জারি করেছে মোট ঋণের ২ ভাগ কৃষিঋণ বিতরণ করতে হবে। এ কারণে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো অনেকটা বাধ্য হয়ে কৃষিঋণ বিতরণ করে। তারপরও বেসরকারি ব্যাংকগুলো এনজিওর মাধ্যমে কৃষিঋণ বিতরণ করে। এজন্য কৃষককে ২২ থেকে ২৭ শতাংশ সুদ হার গুনতে হয়।
অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিজ শাখার মাধ্যমে কৃষিঋণ বিতরণ করে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদ নিয়ে থাকে। তথ্য অনুযায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে ৫১টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক বিতরণ করেছে ১১ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা এবং এ ঋণের বিপরীতে সুদ দিতে হয়েছে ২২ থেকে ২৭ শতাংশ হারে। অন্যদিকে আটটি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক বিতরণ করেছে ৯ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা কৃষিঋণ। এ ঋণের জন্য কৃষকরা সুদ দিয়েছে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ হারে।
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি Alokito Sakal'কে জানাতে ই-মেইল করুন- dailyalokitosakal@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
Alokito Sakal'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।