মানদণ্ডে উত্তীর্ণরাই পাবেন মনোনয়ন
প্রকাশিত : ০৪:৪৭ AM, ৪ নভেম্বর ২০১৯ সোমবার ১১৯ বার পঠিত
সরকারের শুদ্ধি অভিযানের মধ্যেই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী জানুয়ারিতে এই দুই সিটির নির্বাচন করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল রোববার এ ঘোষণা দেয় ইসি। যদিও এ ঘোষণার আগেই নির্বাচনের পালে হাওয়া লেগেছে। এতে রাজধানীর অলিগলি সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে। এলাকাবাসীর দোয়া চাওয়া এই প্রার্থীর বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের। তারা দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য ইতোমধ্যেই দৌড়ঝাঁপও শুরু করেছেন। তবে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে বিশ্বস্ত মাধ্যম দিয়ে পদপ্রার্থীদের ওপর জরিপ চালাচ্ছেন। এ ছাড়া দলীয়ভাবেও জরিপ চলছে। জরিপের মানদ-ে যারা উত্তীর্ণ হবেন, তারাই পাবেন দলীয় মনোনয়ন। সে অনুযায়ী দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন শেখ হাসিনা।
জানা গেছে, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে শিগগির। তাই দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের পাশাপশি রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিষয়টি ইতোমধ্যেই আমলে নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। মেয়র পদের পাশাপাশি কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী বাছাইকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনে আবার বিজয় নিশ্চিত করতে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে জনপ্রিয় এবং সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার কথা ভাবছে দলটি। তবে তফসিল ঘোষণার পরই চূড়ান্ত করা হবে প্রার্থী।
এতে মেয়র প্রার্থী বাছাইয়ে জনপ্রিয়তা, ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্যতাসহ বেশ কিছু বিষয়কে বিবেচনা করার কথা ভাবছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী-পর্যায়ের একাদিক নেতা প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, ঢাকার প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে জরিপ চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েকটি বিশ্বস্ত মাধ্যম দিয়েও পদপ্রার্থীদের জরিপ চালাচ্ছেন। সে অনুযায়ী দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা দেবেন তিনি। বিভিন্ন জরিপে বর্তমান কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরের অধিকাংশের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করছেন তৃণমূল নেতাকর্মী ও বাসিন্দারা। গত মেয়াদে যারা দলীয় মনোনয়নে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে মূল্যায়ন করেননি, এবার তাদের মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। যেসব প্রার্থী নিজের জনপ্রিয়তা দিয়ে জয়লাভ করতে পারবেন, তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। মেয়র পদেও সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে কাজ চলছে।
দলীয় সূত্র বলছে, ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ ও সাধারণ মানুষের মৃত্যু নিয়ে বিরূপ প্রভাব পড়েছে জনমনে। এ ব্যাপারে প্রশ্ন উঠেছে বর্তমান দুই মেয়রের সক্ষমতা নিয়ে। তাই নতুন মুখের কথা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছে না আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর জন্য জরিপ চলছে। দলীয়ভাবে জরিপ হচ্ছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিভিন্নভাবে জরিপ চালাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে প্রার্থীদের অতীতের কর্মকা-ই মূল্যয়ন করা হবে। আমরা প্রার্থীদের যোগ্যতা, সততা ও জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা এবং দেশের জন্য কাজ করবেনÑ এমন নেতৃত্বকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছি।
এ ছাড়া সম্প্রতি সরকারের শুদ্ধি অভিযানে আওয়ামী লীগের অনেক প্রভাবশালী নেতা গ্রেফতারও হয়েছেন। আর এ অভিযানে বাদ পড়েননি দুই সিটির কাউন্সিলররাও। সরকারের এ অভিযানে রাজধানীর দুই সিটির অন্তত ৩৫ কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে দখল, মাদক, ক্যাসিনো-কা-, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকা-সহ নানা অভিযোগ উঠেছে। সেসব কাউন্সিলর ও তাদের সম্পদ গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন। তাই বেশ কিছু কাউন্সিলরের পদ শূন্য হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কাউন্সিলর পদে নতুনদের আগমনের সম্ভাবনা বেশি। আবার একাদিক কাউন্সিলর আগামীতে পদে থাকতে চান না। তাই এবার সিটি নির্বাচনে ক্লিন ইমেজের নেতাদের এনে বিতর্কমুক্ত মেয়র ও কাউন্সিলর দিতে চায় আওয়ামী লীগ। কারণ জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের দায়িত্বে থাকা মেয়র ও কাউন্সিলররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাই এসব বিষয় মাথায় রেখেই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে সতর্কভাবে এগোচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি।
দলীয় প্রার্থীর বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই প্রার্থিতা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে। যে প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা দলের এবং নেতাকর্মীদের কাছে থাকবে, যার বিরুদ্ধে কোনো অনৈতিক অভিযোগ থাকবে নাÑ এমন প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, মেয়রদের কাজ বেশি করতে হবে, কথা কম বলতে হবে। তারা বেশি কথা বলে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাচ্ছেন। নানা সমস্যায় জর্জরিত ঢাকা মহানগরীর মানুষের অনেক প্রশ্নই থাকতে পারে। তাই তাদের প্রশ্নগুলোকে সামনে রেখেই আগামীতে মেয়র প্রার্থী বিবেচনা করা হবে। তিনি আরো বলেন, যেহেতু সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে, তাই আমরা এ নিয়ে অবগত রয়েছি। আমাদের সভাপতির (শেখ হাসিনা) সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সিটি নির্বাচনের কাজ চালিয়ে যাব। প্রার্থীর ক্ষেত্রে জনসম্পৃক্ত থেকে কাজ করেও সমালোচনার ঊর্ধ্বে থাকবেনÑ এমন নেতৃত্ব দলের মনোনয়ন পাবেন।
এ ছাড়া কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষকে যারা মূল্যায়ন করেননি, তাদের এবার মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলেও হুশিয়ারি দিয়েছেন দলটির নেতারা।
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি Alokito Sakal'কে জানাতে ই-মেইল করুন- dailyalokitosakal@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
Alokito Sakal'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।