বংশী নদী থেকে বালু উত্তোলন চলছেই
প্রকাশিত : ১১:৪৫ AM, ৫ অক্টোবর ২০১৯ শনিবার ২১৯ বার পঠিত
ইজারা ছাড়াই ধামরাইয়ে বংশী নদীতে দীর্ঘদিন ধরে অর্ধশতাধিক ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে কিছু ব্যক্তি। উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে মাঝেমধ্যে দু-চারটি করে ড্রেজার ভেঙে দিলেও পরক্ষণেই আবার ড্রেজার বসিয়ে চলে বালু উত্তোলন। মাঝেমধ্যে বালু উত্তোলন কাজে নিয়োজিত দিনমজুরদের ধরে জরিমানা করা হলেও বালু উত্তোলনের হোতারা আড়ালেই থেকে যায়। তাদের বিরুদ্ধে কোনো নিয়মিত মামলা দেওয়া হয় না। মাস খানেক আগে এ বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে ফরিদ হোসেন নামে এক বালু ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যাও করা হয়েছে।
১০ বছর আগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধামরাইয়ের বংশী নদীর তিনটি বালুমহাল ইজারা দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় ইজারাদারদের সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল পুলিশের গাড়িও। প্রতিবাদ করায় ইজারাদাররা সোমভাগ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলীকেও মারধর করেছিল। এরপর টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে টোপেরবাড়ি এলাকার রুবেল হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাত করেছিল প্রতিপক্ষ। ওই সময় থেকে জেলা প্রশাসন বালুমহাল ইজারা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। কিন্তু থেমে থাকেনি বালু উত্তোলন। এ অবৈধ বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে গত ২৯ আগস্ট সানোড়া ইউনিয়নের সুইচখালী গ্রামের ফরিদ হোসেনকে রাতের আঁধারে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। গত বছরের অক্টোবরে দুদকের ২০৬ হটলাইনে ধামরাইয়ের কোনো এক ব্যক্তির অভিযোগের পর সংস্থার এনফোর্সমেন্ট অভিযানে সমন্বয়কারী ও মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরীর নির্দেশে উপজেলা প্রশাসন বংশী নদীতে অভিযান চালিয়ে সাত-আটটি ড্রেজার আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এর পরও স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজন বালু উত্তোলন করেই যাচ্ছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ধামরাইয়ের বংশী নদীর মহিশাষীতে হাসান, পানকাত্তায় রুহুল আমিন, শাসনে আবদুল লতিফ, বাস্তায় জিল্লুর রহমান, চর চৌহাট এলাকায় শরীফ হোসেন, চৌহাট বাজার এলাকায় আনোয়ার হোসেন সিকদার, আগ জেঠাইল কলুপাড়ায় আলমগীর হোসেন দীর্ঘদিন ধরে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছেন। এ ছাড়া বাসনা, টোপেরবাড়ি, হাট কুশুরা পাড়াগ্রাম, আমছিমুর, গাওতারা, টেটাইল, কাচা রাজাপুর, ভাকুলিয়াসহ বংশী নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে অর্ধশতাধিক ড্রেজার বসানো হয়েছে। এসব পয়েন্ট থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার ট্রাক বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে ফসলি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাটবাজার, গুচ্ছগ্রাম, কবরস্থান, সেতু ভাঙনের মুখে পড়েছে। নদীতে বিলীন হয়ে গেছে অনেক ফসলি জমি।
গত বুধবার ইউএনও সামিউল হক ধামরাইয়ের পানকাত্তা এলাকায় অভিযান চালিয়ে রুহুল আমিন নামে এক বালু উত্তোলনকারীকে আটকের পর ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এর পরও সেখানে থেমে নেই বালু উত্তোলন।
চর চৌহাট এলাকার আবুল হোসেন, ফজল হকসহ অনেকেই জানান, ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে তাদের বহু ফসলি জমি ভাঙনের মুখে পড়েছে। প্রতিবাদ করলে মামলা করার হুমকি দেয় বালু উত্তোলনকারীরা।
ধামরাইয়ের বালিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আহম্মদ হোসেন বলেন, বালু উত্তোলন করার ফলে অনেক ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকিতে রয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা। বালু উত্তোলন বন্ধ করা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে ধামরাইয়ের ইউএনও সামিউল হক বলেন, বংশী নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে বুধবার রুহুল আমিন নামে এক ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এখন থেকে আর কোনো ব্যক্তিকেই বংশী নদী থেকে বালু উত্তোলন করতে দেওয়া হবে না। পর্যায়ক্রমে অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা ও জেল-জরিমানা করা হবে।
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি Alokito Sakal'কে জানাতে ই-মেইল করুন- dailyalokitosakal@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
Alokito Sakal'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।