পুরাকাটা-বরগুনা-বড়ইতলা মহাসড়ক প্রশস্তকরণ কাজ শেষ হবে কবে!
প্রকাশিত : ০৬:৩৩ AM, ৩ অক্টোবর ২০১৯ বৃহস্পতিবার ২১৯ বার পঠিত
বরগুনা (উত্তর) :পুরাকাটা-বরগুনা-বড়ইতলা আঞ্চলিক মহাসড়কের বর্তমান অবস্থা
‘গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প’-এর আওতায় শুরু হওয়া পুরাকাটা-বরগুনা-বড়ইতলা মহাসড়কের কাজ শেষ হবে কবে—এমন প্রশ্ন এখন স্থানীয় মানুষের।
বরগুনা জেলা শহরের সঙ্গে পটুয়াখালী-বরিশাল ও ঢাকাসহ অন্যান্য জেলার গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম পটুয়াখালী-আমতলী-বরগুনা-কাকচিড়া আঞ্চলিক মহাসড়ক। এ সড়কের কিছু অংশের (পুরাকাটা-বরগুনা-বড়ইতলা) কাজ ধীরগতিতে চলায় সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। একে তো বর্ষামৌসুম তার ওপর আবার খোঁড়াখুঁড়ি, যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। রাস্তার বেহাল দশার কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। সবমিলিয়ে যেন এক অশান্তি-অস্বস্তির সড়ক এটি। এ রাস্তাটি এতই অপ্রশস্ত যে, দুটি বাস পাশাপাশি চলাচল করতে পারে না। এ সমস্যা নিরসনে প্রকল্পটি হাতে নেয় বরগুনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। এ প্রকল্পের টেন্ডার হলেও কিছু অংশের কাজ কেবলমাত্র শুরু হয়েছে।
২০১৮ সালের মাঝামাঝি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের আওতায় তিনটি প্যাকেজে পুরাকাটা-বরগুনা-কাকচিড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের ২০.৬৫ কিলোমিটার রাস্তা পুননির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। মোট বরাদ্দ ৯৪ কোটি ৬৯ লাখ ৬৯ হাজার টাকার তিনটি কাজ পায় যথাক্রমে ঝালকাঠির মাফুজ খান লিমিটেড, বরিশালের ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন, মেসার্স কহিনুর এন্টারপ্রাইজ ও ওরিয়েন্ট ট্রেডিং এন্ড বিল্ডার্স। এদের মধ্যে মাহফুজ খান লিমিটেড ইটবাড়িয়া থেকে টাউনহল পর্যন্ত ৬.৮০০ কিলোমিটার মহাসড়কের কার্যাদেশ ২০১৯ সালের ৪ জুলাই পেলেও অদ্যাবধি কাজ শুরু করেনি। কিন্তু ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর কাজটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
অপরদিকে বরিশালের ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন, মেসার্স কহিনুর এন্টারপ্রাইজ ও ওরিয়েন্ট ট্রেডিং এন্ড বিল্ডার্স বড়ইতলা ফেরিঘাট থেকে বরগুনা শহরের ক্রোক স্লুইজ ও পুরাকাটা থেকে ইটবাড়িয়া পর্যন্ত ৯.২০ কিলোমিটার রাস্তা ২০১৮ সালের ৯ আগস্ট কাজ শুরু করে। কাজটি সমাপ্তির কথা রয়েছে ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি। কিন্তু কার্যাদেশ পাওয়ার পর এ পর্যন্ত কাজের তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।
অপরদিকে কাকচিড়া গুদিঘাটা থেকে বাইনচটকি ফেরিঘাট পর্যন্ত ৪.৮০০ কিলোমিটার রাস্তার কাজ পায় ওরিয়েন্ট ট্রেডিং এন্ড বিল্ডার্স, এমএম বিল্ডার্স এবং মেসার্স কহিনুর এন্টারপ্রাইজ। ২০১৮ সালের ১৭ ফ্রেরুয়ারি কাজ শুরু হয়ে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০১৯ সালের ১৮ অক্টোবর। সরেজমিনে দেখা যায় কাজ যা হয়েছে তা উল্লেখযোগ্য নয়।
পুরাকাটা ইটবাড়িয়া এলাকার বেল্লাল হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, টাউনহল থেকে পুরাকাটা পর্যন্ত রাস্তার বেহাল দশা। এ রাস্তার যে অংশে কাজ চলছে তা উঁচুনিচু থাকায় বৃষ্টির পানি জমে, যানবাহন চলাচলে ভোগান্তি হচ্ছে। তাছাড়া এই রাস্তার পাশের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো কোন ক্ষতিপূরণ পায়নি। চরকলোনী এলাকার ড্রাইভার সবুজ ও চরকগাছিয়া গ্রামের রনি চৌধুরী বলেন, রাস্তাটির যে খারাপ অবস্থা তা নিজ চোখে না দেখলে বুঝবেন না। খোয়া বালু দিয়ে রোলার না দেওয়ায় পানি জমে যায়। ফলে গাড়ি নিয়ে দুর্ভোগে পড়তে হয়। অপরদিকে রাস্তার পাশ কেটে রাখায় তাতে প্রায়শই যানবাহন পড়ে যাচ্ছে। ফলে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে যাত্রী ও চালকরা। এ অংশে এ পর্যন্ত মাত্র ৩ শতাংশ কাজ হয়েছে বলে সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে বরগুনা সদর উপজেলার ৭ নম্বর ঢলুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা কামাল টিটু বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে মহাসড়কের যে অংশ পড়েছে তার কাজ অত্যন্ত নিম্নমানের, কাজের যে অগ্রগতি তাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। রাস্তায় বড়ো বড়ো খোয়া ফেলে রাখা হয়েছে। এতে জনগণের দুর্ভোগের সীমা নেই।’
অপরদিকে একই উপজেলার ৬ নম্বর বুড়িরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘এ মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ অংশই আমার ইউনিয়নে। পুরাকাটা থেকে সোনাখালী পর্যন্ত রাস্তার কাজের ধীরগতির কারণে জনদুর্ভোগ বেড়েই চলছে, প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার বলা সত্ত্বেও কোনো কাজ হচ্ছে না। প্রবল বর্ষার কারণে রাস্তায় সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দের। মূল কাজ শুরু না হওয়ায় কাজের মান সম্পর্কে এখনই বলা যাচ্ছে না। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ কিছুতেই শেষ হবে বলে মনে হয় না।’
এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহফুজ খান লি.-এর প্রজেক্টের প্রকোশলী এমডি সজিব হোসেন বলেন, ‘গত ৪ জুলাই’ ১৯ কার্যাদেশ পাওয়ার পর আগস্ট মাস শেষ হয়েছে প্রসেসিংয়ে। কাজ শুরু হয়েছে মাত্র ১৫ দিন পূর্বে। ইতিমধ্যে শতকরা তিন ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে, কিন্তু বৃষ্টির কারণে কাজে কিছুটা বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। আশাকরি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব।’
বরগুনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন বলেন, দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করতে বিলম্ব হওয়ায় সময়মতো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করতে পারেনি।’
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি Alokito Sakal'কে জানাতে ই-মেইল করুন- dailyalokitosakal@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
Alokito Sakal'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।