তেঁতুলিয়া চা-শিল্প হুমকির মুখে
প্রকাশিত : ০৭:২৮ AM, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সোমবার ২৫১ বার পঠিত
এক বছরেই হঠাত্ কচি চা-পাতার দরপতনে ব্যাপক লোকসানে হতাশ চা-চাষিরা। চলমান লোকসানের জের ধরে চা-চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন প্রায় ৫ হাজার ক্ষুদ্র চা-চাষি। হুমকিরমুখে পড়েছে উত্তরের সীমান্তবর্তী তেঁতুলিয়া উপজেলার চা-শিল্প। এই শিল্পকে ঘিরে নতুন নতুন চা-কারখানা গড়ে উঠলেও মিলছে না চা-পাতার ন্যায্যদাম। কারখানা মালিক ও চা-চাষিরা পালটাপালটি অভিযোগ করছেন।
চা-চাষিদের অভিযোগ, কারখানা মালিকরা সিন্ডিকেট তৈরির মাধ্যমে চা-পাতার দাম কমিয়ে দেওয়ার কারণে তারা তাদের উত্পাদিত চা-পাতার ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। বাজারে এখন চা-পাতার দামের চেয়ে উত্পাদন খরচ বেশি। বেশ কিছুদিন ধরেই কাঁচা চা-পাতার দরপতন চলছেই। কিন্তু চা-কারখানা মালিকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের অভিযোগ, ক্ষুদ্র চাষিরা কাঁচাপাতা তুলতে সঠিক নিয়ম না মানায় কমে গেছে চায়ের মান। সে কারণে কমেছে কাঁচা চা-পাতার দামও। কাঁচা চা-পাতার মূল্য বাড়ানোর জন্য চাষিদের নিয়ম মেনে কাঁচা চা-পাতা সংগ্রহ ও ভালো চারা রোপণের পরামর্শ দিয়েছে টি-বোর্ড।
চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কিছুদিন পূর্বে চা-কারখানাগুলো ১৪-১৫ টাকা কেজি দরে পা-পাতা কিনছে। এখান থেকে আবার বিভিন্ন অজুহাতে শতকরা ২০/৩০ ভাগ পাতা কেটে নিচ্ছে চা-কারখানা কর্তৃপক্ষ। এতে প্রতি কেজি চা উত্পাদনে কৃষকের খরচ পড়ছে ২২-২৩ টাকা। এতে করে ক্ষুদ্র চা-চাষিদের মজুরি এবং সার কীটনাশকের খরচ জোগাতে ঘর থেকে টাকা ঢালতে হচ্ছে। যার কারণে প্রতিনিয়ত এখন লোকসান গুনতে হচ্ছে ক্ষুদ্র চা-চাষিদের। তবে সম্প্রতিকালে চাষিদের আন্দোলনের কারণে চা-মালিকরা তা কিছুটা বৃদ্ধি করে। সরকারিভাবে চা-পাতার মূল্য নির্ধারণ করলেও সেটা বহাল থাকেনি। সর্বশেষ আন্দোলনের ফলে টি-বোর্ডের কর্মকর্তাসহ জেলা প্রশাসক মূল্য পুনঃনির্ধারণ কমিটি ২৪.৫০ পয়সা প্রতি কেজি। এক কুঁড়িতে চার/পাঁচ পাতার চা-পাতা সরবরাহের জন্য চাষিদের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু কারখানা মালিকদের প্রতি বৃন্তে চার/পাঁচ পাতার বেশি কাঁচা চা-পাতা না নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হলেও তারা এই নির্দেশনা মানছেন না। চা-কারখানাগুলো কোনো নিয়মের পরোয়া না করে বর্তমানে প্রতি কেজি চা-পাতার দর বৃদ্ধি করে সর্বোচ্চ ১৮ টাকা ৫০ পয়সা এবং সর্বনিম্ন ১৬ টাকায় ক্রয় করছে। সরেজমিনে উপজেলার দর্জিপাড়ার আব্দুল করিম, সালাম, প্রেমচরণ জোত গ্রামের আনোয়ার, শাহজাহান, বিহারীপাড়ার আল মামুন, তেলিপাড়ার মিজানুর রহমান, আজিজনগর গ্রামের আব্দুল জলিলসহ অর্ধশতাধিক চা-চাষির সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, চা-চাষে ব্যাপক লোকসানে আছি। এমনিতে চা-পাতার দাম কম, তার মধ্যে অনেক সময় কারখানাগুলো চা-পাতা নিচ্ছে না। নিলেও ৩০-৩৫% পর্যন্ত কেটে নিচ্ছে। আবার চা-পাতা যাতে সময়মতো না দেওয়া যায় সেজন্য পরিকল্পিতভাবে চা-কারখানা বন্ধ রাখা হয়।
এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলু ও প্রশাসন চেষ্টা করছেন যাতে চা-চাষিরা উত্পাদিত চা-পাতার ন্যায্যমূল্য পায়।
তারা কারখানা মালিকদের সঙ্গে কথা বলছেন। জেলা প্রশাসন চা-কারখানা মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে মূল্য নির্ধারণ করলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। চা-কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছেন, ক্ষুদ্র চা-চাষিরা গাছ থেকে চা-পাতা সংগ্রহের নিয়ম মানছেন না। চা-পাতার কালচার যথাসময়ে বজায় রাখছেন না। স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপজেলা সভাপতি হবিবুর রহমান হবি বলেন, পঞ্চগড়ে সরকারিভাবে একটি চা-কারখানা স্থাপন করার কথা ছিল, সেটি দ্রুত স্থাপন করা হোক। সেইসঙ্গে পঞ্চগড়ের সব চাষিকে চা একটি বিক্রয়কেন্দ্রে বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। সেখান থেকে কারখানা মালিকরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী চা কিনে নিয়ে যাবেন। চলমান চা-পাতার দরপতনের অচলাবস্থা দূর হবে কী না এমন আশঙ্কায় প্রহর গুনছেন চা-চাষিরা।
ইম্পরিয়াম টি ফ্যাক্টরির মালিক এ আর আতিক জানান, চট্টগ্রামের অকশন মার্কেটে দাম পড়ে যাওয়ায় চাষিদের নির্ধারিত দাম দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমরা সর্বোচ্চ ১৬ টাকা ৮০ পয়সা দিতে পারছি। এর বেশি দিতে গেলে আমাদের পোষাবে না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ চা-বোর্ডের ‘নর্দান প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ শামীম আল মামুন জানান, নিলাম বাজারে এখানকার চায়ের দাম কমায় কাঁচাপাতার দামে প্রভাব পড়েছে। চা উত্পাদনে গুণগতমান রক্ষা করতে পারলে এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব।
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি Alokito Sakal'কে জানাতে ই-মেইল করুন- dailyalokitosakal@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
Alokito Sakal'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।