জব্দ করা টাকার কী হবে
প্রকাশিত : ০৭:৪৪ AM, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ শুক্রবার ৩১০ বার পঠিত
গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি স্থানে জুয়া, মাদক ও অবৈধ অর্থের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান চলছে। এসব অভিযানে নানা ধরনের অবৈধ জিনিসপত্রের পাশাপাশি নগদ অর্থও জব্দ করা হয়েছে। যার পরিমাণ প্রায় দুইশ কোটি টাকা। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও রাজনীতিবিদের বাসায় অভিযান চালিয়ে কোটি কোটি টাকা জব্দ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে বেশ কয়েকজনের ব্যাংক হিসাব স্থগিত ও কয়েকজনের ব্যাংক হিসাবের তথ্য তলব করা হয়েছে।
গত শুক্রবার রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত যুবলীগ নেতা এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমকে আটক করে র্যাব। এসময় বেশ কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র ও মাদক দ্রব্য ছাড়াও নগদ এক কোটি ৮০ লাখ টাকা ও ১৬৫ কোটি টাকার ওপরে এফডিআরের (স্থায়ী আমানত) নথি জব্দ করা হয়। এ ঘটনার পর জি কে শামীম ও অপর যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার নিজস্ব এবং পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। কৃষকলীগ নেতা শফিকুল আলমের ব্যাংক অ্যাকাউন্টও স্থগিত করা হয়েছে।
এছাড়া গত মঙ্গলবার রাজধানীর গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক ও সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়ার বাসা থেকে বিপুল টাকা ও স্বর্ণ জব্দ করেছে র্যাব। তারা ক্যাসিনোর লাভের টাকা বাসায় নিয়ে রাখতেন বলে জানিয়েছে র্যাব।
সূত্রাপুরে তাদের বাড়িতে থাকা তিনটি ভল্ট থেকে নগদ এক কোটি পাঁচ লাখ টাকা ও আট কেজি (৭২০ ভরি) স্বর্ণ পাওয়া যায়। এর পর এনামুল হকের কর্মচারী আবুল কালাম আজাদের বাসায় অভিযান চালিয়ে একটি ভল্ট থেকে এক হাজার টাকার অনেকগুলো বান্ডিল পাওয়া যায়। তাতে প্রায় দুই কোটি টাকা রয়েছে বলে জানায় র্যাব। পরে রাজধানীর নারিন্দায় এনামুল হকের এক বন্ধুর বাসা থেকে নগদ দুই কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন ও তার স্ত্রী ফারজানা চৌধুরী এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)। গত মঙ্গলবার সিআইসি থেকে সরাসরি ব্যাংকগুলোতে চিঠি দিয়ে সরকারদলীয় প্রভাবশালী ও আলোচিত এ দুই নেতা এবং তাদের স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এসব ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে। বিএফআইইউ প্রধান ও ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, সন্ত্রাসী ও মানি লন্ডারিং বিষয়ে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে বিএফআইইউ তা অনুসন্ধান করে। সমপ্রতি এসব অপরাধে যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের হিসাবও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। অনুসন্ধান চলাকালে তাদের হিসাবে টাকা জমা হবে কিন্তু উত্তোলন করা যাবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ- সিপিডির গবেষণা কর্মকর্তা খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, প্রায় প্রতি বছরই বাজেট প্রণয়নের সময় একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের জরিমানা দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এর মানে এটাই দাঁড়ায় যে, সরকার জানে অনেকের কাছেই কালো টাকা রয়েছে। কিন্তু তারা অজানা কারণে তাদের কখনো ধরেনি। তবে দেরিতে হলেও ভালো যে, সম্প্রতি অবৈধ উপার্জন বা অর্থের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। এসব অভিযানে যেসব অপ্রদর্শিত অর্থ পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোর মালিক যথাযথ বৈধ উৎস দেখাতে না পারলে তা সরকারের কোষাগারেই জমা হবে। এই অভিযান যদি কঠোরভাবে পরিচালনা করা হয়, তাহলে এখান থেকে আসা অর্থের পরিমাণ যে কত হতে পারে, তা আমাদের ভাবনার বাইরে।
এদিকে, এইসব অবৈধ অর্থের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অবৈধ অর্থ অর্জনকারীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে হবে। তাদের আগে নোটিস দিতে হবে। এই টাকা কোথায় পেয়েছে সেটা জিজ্ঞাসা করতে হবে। সঠিক জবাব দিতে না পারলে অন্য ব্যবস্থা। আর দিতে পারলে তাদের আয়ের সঙ্গে যোগ করে আয়কর আদায় করা হবে। তবে গতকাল সাংবাদিকরা এই জব্দ করা অর্থের কী হবে জানতে চাইলে, তিনি কোনো জবাব দেননি।
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি Alokito Sakal'কে জানাতে ই-মেইল করুন- dailyalokitosakal@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
Alokito Sakal'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।