ঘনিষ্ঠ নেতারা পাশে নেই
প্রকাশিত : ০৬:১৬ AM, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ শনিবার ২৬৭ বার পঠিত
ক্যাসিনো গডফাদার ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট গ্রেফতার এড়াতে শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে দুঃসংবাদ হল, একে একে তাকে ছেড়ে যাচ্ছেন সবাই। অবস্থা বেগতিক দেখে এখন আর তার পাশে কেউ থাকতে চাইছেন না। ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত দলের প্রভাবশালী কোনো নেতাই তদবির করতে চান না। কেননা দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অভিযানের বিষয়ে রয়েছেন কঠোর অবস্থানে।
এছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রতিদিন গণমাধ্যমের সামনে মাদক, সন্ত্রাস ও দুর্নীতি দমনের এই অভিযান নিয়ে জিরো টলারেন্সের কথা বলছেন। এজন্য সম্রাটের পক্ষে তদবির করার ঝুঁকি নিতে কেউ সাহস পাচ্ছেন না। তবু এই সংকট উত্তরণে মরিয়া সম্রাট। কিন্তু দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও ব্যাংক হিসাব জব্দ হওয়ায় তিনি কোনো চেষ্টায় যেন হালে পানি পাচ্ছেন না।
আত্মগোপনে থাকা ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের বিষয়ে এমন সব তথ্য জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। এদিকে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, ‘সম্রাটের অবস্থানের বিষয়ে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তাকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রেও আমাদের কোনো বাধা নেই। তার অবস্থানের বিষয়ে তথ্য পেলেই তাকে গ্রেফতার করা হবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্রাটকে অধিকাংশ নেতা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ সম্রাটের পক্ষে থাকলেও প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। গোপনে হয়তো কোথাও তার পক্ষে তদবির করার চেষ্টা করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলোর দাবি অনুযায়ী, সম্রাট রাজধানীর অভিজাত এলাকার এক প্রভাবশালী নেতার বাসায় এখনও অবস্থান করছেন। সেখানে থেকে তিনি নিজেকে রক্ষা করার সব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে যে কোনো সময় তিনি অবস্থান পরিবর্তন করতে পারেন। সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট টিমের সার্বক্ষণিক শ্যেনদৃষ্টি তার গতিবিধির দিকে।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সম্রাটের অবস্থানের বিষয়ে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে। সবুজ সংকেত পেলেই তাকে গ্রেফতার করা হবে। অল্প কয়েকজন নেতার সঙ্গে নানা মাধ্যমে তিনি যোগাযোগ রাখছেন। এখন তার মূল লক্ষ্য হল, যে কোনো উপায়ে দেশত্যাগ করা। তবে রোববার তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিমানবন্দর এবং স্থলবন্দরে আদেশের কপি পাঠানো হয়েছে। এজন্য বৈধপথে তিনি আর দেশ ছাড়তে পারছেন না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, সম্রাটকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তবে কী কারণে তার গ্রেফতার বিলম্বিত হচ্ছে সেটি কেউ স্পষ্ট করছেন না। আনঅফিসিয়াল তথ্য দিলেও অফিসিয়ালি কেউ কিছু বলতে নারাজ। তবে তারা বলছেন, সম্রাটকে গ্রেফতার হতেই হবে। এটি সময়ের ব্যাপার মাত্র। কেননা ক্যাসিনো ব্যবসা করে সম্রাট বিপুল পরিমাণ টাকা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেছেন।
এছাড়া তাকে গ্রেফতার করা গেলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। সমাজের যেসব প্রভাবশালী তার কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়েছেন এবং কোথায় কিভাবে এসব টাকার ভাগ গেছে তার আদ্যোপান্ত জানা যাবে। তারা মনে করেন, সম্রাট গ্রেফতার হলে অনেক প্রভাবশালীর মুখোশ উন্মোচন হয়ে যাবে। মোদ্দা কথা, যারা সম্রাটকে আশকারা দিয়ে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন, নিজেদের প্রয়োজনে ইচ্ছেমতো ব্যবহার করেছেন তাদের পরিচয় প্রকাশ্যে আসবে।
একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, এসব কারণে সম্রাটের কাছ থেকে সুবিধাভোগীরা তার গ্রেফতার ঠেকানোর সব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তারা প্রকাশ্যে তার পক্ষে তদবির করছেন না। যুবলীগের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা এখনও গোপনে সম্রাটের গ্রেফতার ঠেকাতে তদবির চালাচ্ছেন।
টেন্ডার, চাঁদা ও ক্যাসিনো ব্যবসার অভিযোগে র্যাবের হাতে গ্রেফতার যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া এবং জি কে শামীম হলেন সম্রাটের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে তারা বলেছেন, ঢাকার ক্লাবপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার ফ্ল্যাটে ক্যাসিনো ব্যবসার মূল হোতা সম্রাট। তার হাত ধরেই ২০১৫ সালে ক্লাবপাড়ায় অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসার প্রচলন ঘটে। ঢাকার সব ক্যাসিনো সম্রাটের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জুয়া-ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের শুরুতে সম্রাট আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। এ সময় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু তাকে গ্রেফতার করা হবে না বলেই তিনি মনে করতেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে চাপে রাখতে অভিযানের শুরুর দিকে তিনি দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে কাকরাইলে মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের কার্যালয়ে অবস্থান করেন। কিন্তু অভিযানের গতি ক্রমেই বাড়তে থাকায় তিনি ঘাবড়ে যান। দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা এবং ব্যাংক হিসাব জব্দ করার পর সম্রাট গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগতে থাকেন।
প্রসঙ্গত, ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকার ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে র্যাব। অভিযানে এরই মধ্যে সম্রাটের দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া এবং জি কে শামীমকে গ্রেফতার করা হয়। ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগের দুই নেতাসহ কয়েকজন ‘রাঘববোয়াল’ ধরা পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে তারা বলেছেন, দেশে নেপালিদের মাধ্যমে ক্যাসিনোর প্রচলন করেন সম্রাট। তাকে ভাগের টাকা না দিয়ে ক্লাবপাড়ায় ক্যাসিনো ব্যবসা করা কারও পক্ষে সম্ভব ছিল না।
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি Alokito Sakal'কে জানাতে ই-মেইল করুন- dailyalokitosakal@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
Alokito Sakal'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।