কমে যাচ্ছে নাটকের চরিত্র
প্রকাশিত : ০৪:৪১ AM, ৪ নভেম্বর ২০১৯ সোমবার ১১৭ বার পঠিত
নায়ক-নায়িকানির্ভর হয়ে পড়েছে এখনকার নাটক। শুধুমাত্র এই দুই চরিত্রকে কেন্দ্র করেই অসংখ্য নাটক নির্মাণ হচ্ছে। খুব কম নাটকেই বিভিন্ন চরিত্রের সম্মিলন ঘটে। যে কারণে দেশীয় নাটকে ক্রমাগতভাবে কমছে শিল্পীদের উপস্থিতি। নায়ক-নায়িকার পাশাপাশি মাঝে-মধ্যে দু’একটি পার্শ্বচরিত্র থাকলেও তা ততটা গুরুত্ব পায় না। অল্প সময়ের জন্যই উপস্থাপন করা হয় মা-বাবা, ভাই-বোন, কিংবা বন্ধু চরিত্রকে। সাম্প্রতিক সময়ে বেশিরভাগ নাটকের এমন হালের কারণে বিরক্তি প্রকাশ করছেন দর্শকরা। আগে যেখানে বিভিন্ন চরিত্র রাখা হতো একটি নাটকে। সেখানে সিনিয়র শিল্পীসহ প্রত্যেকেই গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করতেন। বাড়ির দারোয়ান, কাজের বুয়া, মামা-চাচা এমন কি অফিস কলিগের সুন্দর উপস্থাপন ছিল। বাবা-মা থেকে শুরু করে এমন অনেক চরিত্রের সমন্বয় ছিল। তাদের ছাড়া নাটক নির্মাণের কথা ভাবাই যেত না। ফলে নায়ক-নায়িকাদের বাইরে সমান ব্যস্ততা ছিল অন্যান্য চরিত্রের শিল্পীদের। কিন্তু এখন সিনিয়র শিল্পীরা সেদিক থেকে অনেকটাই উপেক্ষিত। অন্য চরিত্রকেও দেখানো হয় কোনো রকমে। এখনকার নাটকে নায়ক-নায়িকার বাইরে বিভিন্ন চরিত্র না থাকায় বৈচিত্র্যতা হারাচ্ছে। ঘুরেফিরে একই মুখ দেখতে দেখতে বিরক্ত হচ্ছেন দর্শক। অন্যদিকে বেকার হয়ে পড়ছেন অভিনয়শিল্পীরা। সময়ের ব্যবধানে দেশে অনেকগুলো টিভি চ্যানেলের পাশাপাশি ইউটিউবের জোয়ার বইলেও কাজের পরিধি বাড়েনি। কাজের সুযোগ পাচ্ছেন না নায়ক-নায়িকার বাইরে অন্য চরিত্রের শিল্পীরা।
নাট্য বোদ্ধাদের মতে, নাটকে বৈচিত্র্যতা নিয়ে আসতে হলে নির্মাতাদের কেবল নায়ক-নায়িকানির্ভর নাটক তৈরির চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ভারতীয় চ্যানেলগুলো দেশীয় দর্শকদের ধরে রাখছে ফ্যামিলি ড্রামা দিয়ে। আমাদের নির্মাতাদেরও পারিবারিক গল্পের দিকে জোর দিতে হবে বলেও মনে করেন তারা। তাহলে একদিকে গুণী সব সিনিয়র শিল্পীও নিয়মিত হবেন, পাশাপাশি নাটকে বৈচিত্র্যতা আসবে।
বরেণ্য নাট্যাভিনেতা ড. ইনামুল হক বলেন, ‘আমাদের সময়ে একটি নাটকে অনেক চরিত্র থাকত। নাটকে যখন অনেক চরিত্র থাকবে তখন বিভিন্ন বয়সের শিল্পীর প্রয়োজন হবে। তখনকার নাটকগুলো পারিবারিক গল্পের ছিল। এখন অনেক নাটকের গল্পে নায়ক-নায়িকার বাইরে অন্য চরিত্র রাখা হয় না। এটার কিছু কারণ আছে তার মধ্যে অন্যতম বাজেট স্বল্পতা। খরচ বাঁচাতে এমন করা হয়। অন্যদিকে পারিবারিক গল্পের নাটক নির্মাণ করা কঠিন। সময় বেশি লাগে, শিল্পী নির্বাচন করতেও বেগ পেতে হয়। এখনকার অনেক নাটকে এক ধরনের অবাস্তবতাও থাকে। দর্শকও হয়তো চায়। কিন্তু পারিবারিক নাটকে বাস্তবতা থাকে। সেটা সব ধরনের দর্শই পছন্দ করেন।’
নাট্যকার বৃন্দাবন দাস বলেন, আমাদের বর্তমান নাটকে অনেকগুলো সমস্যার মধ্যে এটি একটি। নায়ক-নায়িকার বাইরে অন্য চরিত্র থাকে না, থাকলেও গুরুত্ব কম। এই সমস্যা বহু দিন ধরেই চলছে। এটা অনেকেই শুধু বাজেট স্বল্পতার উপর চাপিয়ে দিতে চান, কিন্তু আমার মনে হয় মানসিকতারও অভাব আছে। এই ধরনের কাজ একটি অসম্পূর্ণ বিষয়। আমাদের বাংলা নাটকের ঐতিহ্যের সঙ্গে এটা যায় না। আমাদের পরিবার, সমাজের সঙ্গে এসব নাটকের তেমন মিল নেই। যারা এসব করেন তারা পরিবার, সমাজ ও ব্যক্তির প্রকৃত রিলেশন না বুঝে এসব নির্মাণ করেন। এখন তো অনেকেই না জেনেই নাটক নির্মাণ করছেন।’
নাট্য নির্মাতা সাগর জাহান বলেন, ‘এই সময়ে পারিবারিক গল্পের নাটক নির্মাণের সংখ্যা কমে গেছে। ফলে নাটকে বাবা-মা, দাদা-দাদি, নানা-নানি থেকে শুরু করে অন্য চরিত্রগুলোর খুব বেশি প্রয়োজন হয় না। যে কোনো ফ্যামিলি ড্রামাতে বরাবরই অনেক চরিত্র পাওয়া যায়। আমাদের বাজেটের কারণে এই সময়ে ফ্যামিলি ড্রামা নির্মাণ সম্ভব হয় না। যার কারণে নির্মাতাদের অনেকেই নায়ক-নায়িকানির্ভর হয়ে গেছেন। তবে আমি আমার নাটকগুলোতে নায়ক-নায়িকার বাইরে আরো অনেক চরিত্র রাখার চেষ্টা করি। সেগুলোর গুরুত্বও থাকে বেশি।’
অভিনয়শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম বলেন, ‘টিভি নাটকে বর্তমানে সাড়ে ১০০০ নিবন্ধিত শিল্পী আছেন। এর মধ্যে অনেক শিল্পীই বেকার। এর মধ্যে অভিনয় জানা গুণী শিল্পীর সংখ্যাও কম নয়। নিয়মিত কাজ করেছেন কিছু শিল্পী। এখন পারিবারিক ও সামাজিক গল্পের নাটক হারিয়ে গেছে। এখন যে ধরনের নাটক তৈরি হয় তাতে নায়ক-নায়িকা ছাড়া অন্যদের কাজের সুযোগ থাকে না। এতে করে কাজের ক্ষেত্র কমে যাচ্ছে। আগের নাটকের মতো শিক্ষক, মেম্বার-চেয়ারম্যান, মামা-খালা, রাখাল, ভাই-বোন এসব চরিত্র নেই বললেই চলে। এজন্য বর্তমান সময়ের নাটক আবেদন হারিয়েছে। নাটকে অভিনয়, রচনা, নির্মাণ ও প্রচারের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম না থাকায় অনেক সমস্যা তৈরি হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি এসব সমস্যা সমাধানের। এতে করে শিল্পীরা বেকার থাকবে না। কাজের ক্ষেত্র তৈরি হবে।’
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি Alokito Sakal'কে জানাতে ই-মেইল করুন- dailyalokitosakal@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
Alokito Sakal'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।