এবার অস্ত্রবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাবে র্যাব
প্রকাশিত : ০৬:৩৯ AM, ৪ অক্টোবর ২০১৯ শুক্রবার ১৩৭ বার পঠিত
দাপুটে নেতাদের কাছে মিলছে অহরহ অবৈধ অস্ত্র। অভিযান চালালেই পাওয়া যাচ্ছে বিপুল অত্যাধুনিক অস্ত্র-গুলি। চাইনিজ রাইফেল থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক পিস্তল, বন্দুক, শটগান সবই পাওয়া যাচ্ছে নেতাদের ভান্ডারে।
সম্প্রতি রাজধানীতে র্যাবের ক্যাসিনোবিরোধী বেশ কয়েকটি অভিযানে মিলেছে একাধিক ভয়ঙ্কর আগ্নেয়াস্ত্র। মূলত এসব অস্ত্রের হুঙ্কার বা মহড়া দিয়েই বিভিন্ন এলাকা বা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠে এক শ্রেণির অস্ত্রবাজ নেতা।
এ অবস্থায় বর্তমানে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এতসব অবৈধ অত্যাধুনিক অস্ত্র নেতাদের কাছে এলো কীভাবে? এসব অস্ত্রের উৎস কোথায়? আগে কেনইবা তারা অস্ত্রসহ ধরা পড়েনি?
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু অবৈধ ক্যাসিনোর বিরুদ্ধেই নয়, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, মাদক ও অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধেও বিশেষ অভিযান চলবে। এরই মধ্যে রাজনৈতিক প্রভাবশালী এক শ্রেণির অস্ত্রবাজ নেতার অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। বিশেষ করে মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রলীগের বেশকিছু নেতার বিরুদ্ধে এই অনুসন্ধান শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের দায়িত্বপ্রাপ্ত এলিট ফোর্স র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার উপ-পরিচালক মেজর হুসেইন রইসুল আজম মনি সময়ের আলোকে বলেন, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একাধিক অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এসব অস্ত্র ব্যবহার করেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাঁদাবাজি, দুর্নীতি ও অবৈধ অপকর্মসহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালানো হচ্ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে ক্যাসিনোবিরোধী বিশেষ অভিযানের সঙ্গে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। র্যাব এ বিষয়ে কাজ করছে।
১৮ সেপ্টেম্বর যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক (গ্রেফতারের পর বহিষ্কারকৃত) খালেদ মাহমুদ ভূইয়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে চারটি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১১৬ রাউন্ড গুলি, ৫৮৫ পিস ইয়াবা, ১০ লাখ টাকা ও বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করে র্যাব। এর মধ্যে তিনটি অস্ত্রের লাইসেন্স থাকলেও সেগুলোর লাইসেন্সের মেয়াদও ২০১৭ সালে শেষ হয়ে যায়। ফলে সবগুলো অস্ত্রই অবৈধ ছিল। এরপর ২০ সেপ্টেম্বর গুলশান নিকেতনে যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা জিকে শামীমের অফিসে অভিযান চালিয়েও বিপুল টাকা, এফডিআর এবং একটি অত্যাধুনিক অস্ত্র, বিপুল পরিমাণ গুলি ও ম্যাগাজিন পায় র্যাব। এ সময় জিকে শামীমের ছয় দেহরক্ষীর কাছেও অস্ত্র পাওয়া যায়।
একই দিনে কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের সভাপতি ও কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা শফিকুল আলম ফিরোজ ওরফে কালা ফিরোজের কাছ থেকেও ক্যাসিনো সামগ্রী ছাড়াও একটি বিদেশি পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলি ও একটি ম্যাগাজিন জব্দ করা হয়। এরপর ২৪ সেপ্টেম্বর গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক এনু ও তার ছোটভাই একই কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়ার কয়েক বস্তা টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করে র্যাব। অভিযানকালে পুরান ঢাকায় তাদের তিনটি বাসায় অভিযান চালিয়ে দুই ভাইয়ের প্রায় পাঁচ কোটি পাঁচ লাখ টাকা, ৭৩০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও ৬টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। তবে অভিযুক্ত এনামুল ও তার ভাই রূপনকে এখনও আটক করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে এনামুল থাইল্যান্ডে চলে গেছে বলেও জানা গেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক শ্রেণির রাজনৈতিক নেতার অপকর্মের বা প্রভাব সৃষ্টির অন্যতম হাতিয়ার ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। তবে ক্ষমতাসীন দলের বা অঙ্গ সংগঠনের মহানগরভিত্তিক অধিকাংশ নেতারই লাইসেন্সকৃত অস্ত্র আছে বলেও জানা যায়। তবে অনেকের ক্ষেত্রেই একটি বৈধ অস্ত্রের আড়ালে রয়েছে আরও অবৈধ অস্ত্র। এগুলো দখল, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্মে ব্যবহার হয়ে থাকে। অনেক সময় অবৈধ এসব অস্ত্র বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভাড়ায় খাটানো হয়। এর আগেও এমনটি ধরা পড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অবৈধ অস্ত্রের বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান কারও কাছেই নেই। এমনকি বৈধ অস্ত্রের বিষয়েও তেমন একটা তদারকি নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
কেননা ক্যাসিনো খালেদের তিনটি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের মেয়াদ দুই বছর আগে শেষ হলেও এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের আগে কোনো পদক্ষেপ ছিল না। তা ছাড়াও একজন মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তিন-চারটি অস্ত্রের লাইসেন্স পান কীভাবে সেটিও বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুধু ক্যাসিনো খালেদ নয়, এমন অনেক নেতা আছে যাদের কাছে অবৈধ অস্ত্রের বলতে গেলে ভান্ডার রয়েছে বলে ধারণা রয়েছে সাধারণ মানুষের।
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি Alokito Sakal'কে জানাতে ই-মেইল করুন- dailyalokitosakal@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
Alokito Sakal'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।