অক্সিজেনের মাত্রা কমে চিংড়ি ঘেরে মড়ক
প্রকাশিত : ০৫:১৭ AM, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার ৪৬১ বার পঠিত
একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম চিংড়ি চাষ। হঠাৎ বৃষ্টিতে ঘেরের পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় চিংড়ি মারা যাওয়ায় আশির ঊর্ধ্ব বয়সী খগেন্দ্র রায় ও তার স্ত্রী পুতুল রানী নির্বাক হয়ে বসে আছেন চিংড়ি ঘেরের পাড়ে। শুধু এই দম্পতি নন, বাগেরহাটের ফকিরহাটের হাজার হাজার চিংড়িচাষি এ অবস্থার শিকার হয়ে এখন দিশেহারা। এদিকে জেলা মৎস্য অফিস বলছে, এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। পুকুরে পানি বাড়ানো, পানিতে অ্যারোয়েটর চালু ও অক্সিজেন ট্যাবলেট প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. খালেদ কনক।
বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায় শনিবার রাতে হঠাৎ বৃষ্টিতে চিংড়ি ঘেরের পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় হাজার হাজার ঘেরের গলদা-বাগদা চিংড়ি মারা গেছে। এতে স্থানীয় চাষিরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। বেশিরভাগ চাষি এনজিও ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চিংড়ি চাষ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু এই ক্ষতি কাটিয়ে কীভাবে তারা ঋণ পরিশোধ করবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। সরকারের কাছে এসব ক্ষতিগ্রস্ত চাষির বিদ্যমান ঋণের সুদ মওকুফ ও বিনা সুদে নতুন করে ঋণ দেওয়ার দাবি জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। রোববার এক দিনেই ফলতিতা মৎস্য আড়তে মরে যাওয়া চিংড়ি বিক্রি হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকার। স্বাভাবিক বাজার থাকলে এ চিংড়ি ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার ওপরে বিক্রি হতো বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। এ ছাড়া মাছের রঙ লাল হয়ে যাওয়ায় অনেকে চিংড়ি ফেলে দিয়েছেন। এতে ওই অঞ্চলের চাষিদের ৩০ কোটি টাকার ওপরে ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, শুধু ফকিরহাট উপজেলা নয়, অক্সিজেন কমে যাওয়ায় বাগেরহাট সদর, মোল্লাহাট ও খুলনার রূপসা উপজেলার ঘেরের চিড়িও মারা গেছে।
সোমবার সকালে ফলতিতা গ্রামের পুতুল রানী ও খগেন্দ্র রায় বলেন, চার বিঘা জমিতে গলদা চিংড়ির চাষ করে জীবন চালাতাম। হঠাৎ চিংড়ি মারা যাওয়ায় আমার প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই টাকার বেশির ভাগই ব্যাংক লোনের টাকা। বৃদ্ধ বয়সে কীভাবে এ টাকা শোধ করব, তা জানি না বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন এই দম্পতি।
চাষি কিরণ চন্দ্র, সুবাস রায় ও অপূর্ব রায় বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে ঘেরের পাড়ে যেতেই দেখি মরা চিংড়ি ভাসছে। পানিতে নেমে দেখি অধিকাংশ চিংড়ি মরে গেছে। আড়তে আমরা এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা কেজি মূল্যের চিংড়ি মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি করেছি। তারা আরও বলেন, আমাদের প্রত্যেকের ঘেরের প্রায় ৮০ শতাংশ চিংড়ি মরে গেছে।
স্থানীয় মূলঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিটলার গোলদার বলেন, হঠাৎ করে ঘেরের চিংড়ি মরে যাওয়ায় চাষিরা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন। বেশির ভাগ চাষি এনজিও ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চিংড়ি চাষ করেন। চিংড়ি মারা যাওয়ায় কীভাবে তারা ঋণ পরিশোধ করবেন, তা নিয়ে এখন দুশ্চিন্তা। এসব ক্ষতিগ্রস্ত চাষির সুদ মওকুফ ও বিনা সুদে নতুন করে ঋণ দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই।
জেলার সবচেয়ে বড় পাইকারি মাছের বাজার ফলতিতা মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি সৈয়দ তহিদুল ইসলাম পপলু বলেন, প্রতিদিনের মতো সকালে আড়তে আসি। দেখি, চারদিক থেকে শুধু চিংড়ি নিয়ে আসছেন চাষিরা। এদিন রোববার সারা দিনে ফলতিতা বাজারে প্রায় তিন কোটি টাকার চিংড়ি বিক্রি হয়েছে। চাষিদের প্রায় ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।
ফকিরহাটের উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অভিজিত শীল বলেন, ঘেরে পানি কম থাকায় এবং হঠাৎ করে বৃষ্টি হওয়ায় ঘেরের পানির অক্সিজেন কমে গিয়ে ফকিরহাট উপজেলার রেজিস্ট্রেশনকৃত আট হাজার ঘেরের প্রায় ৭০ শতাংশ ঘেরের চিংড়ি মরে গেছে। এ ছাড়া বাগেরহাট সদর, মোল্লাহাট ও খুলনার রূপসা উপজেলার ঘেরের চিংড়িও মারা গেছে।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. খালেদ কনক বলেন, বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে পুকুরে অক্সিজেন বাড়াতে ট্যাবলেট ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। চাষিদের আতঙ্কিত না হয়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করে এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এ ছাড়া এ অবস্থা মোকাবেলার জন্য উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাসহ মাঠ পর্যায়ে কর্মরত সবাইকে মাঠে থেকে চাষিদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি Alokito Sakal'কে জানাতে ই-মেইল করুন- dailyalokitosakal@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
Alokito Sakal'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।